বিটকয়েন বনাম ইথেরিয়াম: প্রধান পার্থক্য। কোনটি সেরা?

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন স্ক্যাম এবং এগুলো থেকে বাঁচার উপায়: একটি পরিপূর্ণ গাইড

বিটকয়েন বনাম ইথেরিয়ামের পরিচিতি

বিটকয়েন (Bitcoin) ও ইথেরিয়াম (Ethereum) ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নাম। যদিও উভয়ই ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, তবে তাদের উদ্দেশ্য, প্রযুক্তিগত কাঠামো ও ব্যবহারিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। বিটকয়েন মূলত ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে কাজ করে, যেখানে ইথেরিয়াম একটি ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম যা স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ (DApps) তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচে বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামের বিস্তারিত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

বিটকয়েন (Bitcoin - BTC) পরিচিতি

১. কীভাবে শুরু হলো বিটকয়েন?

বিটকয়েনের সূচনা হয় ২০০৯ সালে, যখন সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) নামের একজন (বা একটি গোষ্ঠী) এটি তৈরি করেন। এটি প্রথম বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল মুদ্রা, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে এবং কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নেই।

২. বিটকয়েনের উদ্দেশ্য ও কাজ

• বিটকয়েন মূলত একটি ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যম, যা ব্যবহারকারীদের ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই লেনদেনের সুযোগ দেয়।
• এটি বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যেখানে প্রতিটি লেনদেন ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয় এবং সবার জন্য স্বচ্ছ থাকে।
• বিটকয়েনকে অনেকেই "ডিজিটাল গোল্ড" বলে থাকেন, কারণ এটি একটি সীমিত সম্পদ (২১ মিলিয়ন কয়েন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ) এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য জনপ্রিয়।

৩. বিটকয়েন ব্লকচেইন ও প্রযুক্তি

• বিটকয়েন প্রুফ অব ওয়ার্ক (PoW) নামক কনসেনসাস অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, যেখানে মাইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি করা হয় এবং লেনদেন নিশ্চিত করা হয়।
• প্রতিটি ব্লকের লেনদেন অনুমোদন হতে গড়ে ১০ মিনিট সময় লাগে।
• বিটকয়েন নেটওয়ার্ক অত্যন্ত নিরাপদ, তবে লেনদেনের গতি তুলনামূলক ধীর এবং ফি কিছুটা বেশি।

৪. বিটকয়েনের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা

• এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
• অনেক প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনকে পেমেন্ট মেথড হিসেবে গ্রহণ করছে।
• দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।

ইথেরিয়াম (Ethereum - ETH) পরিচিতি

১. কীভাবে শুরু হলো ইথেরিয়াম?

২০১৫ সালে ভিটালিক বুটেরিন (Vitalik Buterin) এবং তার দল ইথেরিয়াম তৈরি করেন। এটি শুধুমাত্র একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বরং একটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক স্মার্ট কন্ট্রাক্ট প্ল্যাটফর্ম, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং পরিষেবার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

২. ইথেরিয়ামের উদ্দেশ্য ও কাজ

• ইথেরিয়ামের প্রধান লক্ষ্য হলো স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও ডি-সেন্ট্রালাইজড অ্যাপ (DApps) তৈরি করা।
• এটি এমন একটি বিকেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্লকচেইনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় চুক্তি (Smart Contract) কার্যকর করা যায়, যা নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ লেনদেন নিশ্চিত করে।
• ইথেরিয়াম NFT, DeFi (Decentralized Finance) ও অন্যান্য ব্লকচেইন প্রযুক্তির জন্য মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩. ইথেরিয়াম ব্লকচেইন ও প্রযুক্তি

• ইথেরিয়াম ব্লকচেইন প্রাথমিকভাবে প্রুফ অব ওয়ার্ক (PoW) ব্যবহার করত, তবে Ethereum 2.0 আপগ্রেডের মাধ্যমে এটি প্রুফ অব স্টেক (PoS) মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
• প্রতি ব্লকের লেনদেন অনুমোদনের জন্য ১২-১৫ সেকেন্ড সময় লাগে, যা বিটকয়েনের তুলনায় অনেক দ্রুত।
• ইথেরিয়ামের মোট কয়েনের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই, তবে বার্নিং মেকানিজমের মাধ্যমে সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত হয়।

৪. ইথেরিয়ামের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা

• এটি বিভিন্ন ডি-সেন্ট্রালাইজড অ্যাপ (DApps) এবং NFT মার্কেটপ্লেসের জন্য প্রধান প্ল্যাটফর্ম।
• ইথেরিয়াম নেটওয়ার্ক DeFi (Decentralized Finance) খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
• স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে এটি ব্যবসা, বিনিয়োগ ও স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়।

মূল উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

বিটকয়েন (Bitcoin) ও ইথেরিয়াম (Ethereum) উভয়ই জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, তবে তাদের মূল উদ্দেশ্য এবং ব্যবহারিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। বিটকয়েন মূলত একটি ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে কাজ করে, যেখানে ইথেরিয়াম একটি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিচে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বিটকয়েনের মূল উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

মূল উদ্দেশ্য:

1. বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে কাজ করা – বিটকয়েন তৈরি করা হয়েছে একটি স্বাধীন, সেন্সরশিপ-মুক্ত এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণবিহীন লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে।
2. ব্যাংকিং সিস্টেমের বিকল্প প্রদান করা – বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিটকয়েন এমন একটি লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেখানে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন নেই।
3. মূল্য সংরক্ষণ (Store of Value) হিসেবে কাজ করা – বিটকয়েনকে "ডিজিটাল গোল্ড" বলা হয়, কারণ এটি সীমিত পরিমাণে (২১ মিলিয়ন কয়েন) উপলব্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য জনপ্রিয়।
   

বিটকয়েনের ব্যবহার:

1. লেনদেন ও পেমেন্ট মাধ্যম – অনেক প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিটকয়েন পেমেন্ট গ্রহণ করে।
2. আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স – বিটকয়েন ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে দ্রুত ও কম খরচে অর্থ পাঠানো যায়।
3. বিনিয়োগ ও ট্রেডিং – বিটকয়েন সবচেয়ে বেশি ট্রেড করা ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
4. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় সম্পদ সংরক্ষণ – বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের সময় বিটকয়েন অনেকের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
5. ডিজিটাল স্বর্ণ (Digital Gold) হিসেবে সংরক্ষণ – বিটকয়েনের সরবরাহ সীমিত হওয়ার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এটিকে সোনার বিকল্প হিসেবে ধরে রাখে।

ইথেরিয়ামের মূল উদ্দেশ্য ও ব্যবহার

মূল উদ্দেশ্য:

1. স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contracts) চালানো – ইথেরিয়াম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হওয়া ডিজিটাল চুক্তি তৈরি করা যায়, যা কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই কাজ করে।
2. বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশন (DApps) তৈরি করা – ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডি-সেন্ট্রালাইজড অ্যাপ তৈরি ও পরিচালনা করা যায়।
3. ডি-ফাই (DeFi) ইকোসিস্টেম তৈরি করা – ইথেরিয়াম বিকেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক পরিষেবার (DeFi) জন্য প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যা ব্যাংক ছাড়া ঋণ প্রদান ও লেনদেনের সুযোগ দেয়।
4. NFT (Non-Fungible Token) সাপোর্ট করা – ইথেরিয়াম ব্লকচেইন NFT (ডিজিটাল সম্পত্তি যেমন আর্ট, ভিডিও, মিউজিক ইত্যাদি) তৈরি ও ট্রেডিংয়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ইথেরিয়ামের ব্যবহার:

1. স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় চুক্তি সম্পাদন – ইথেরিয়ামের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো স্মার্ট কন্ট্রাক্ট, যা কোনো তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই লেনদেন নিশ্চিত করতে পারে।
2. ডি-সেন্ট্রালাইজড অ্যাপ (DApps) তৈরি ও পরিচালনা – ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কে বহু ডি-সেন্ট্রালাইজড অ্যাপ যেমন ক্রাউডফান্ডিং, গেমিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ফিনটেক সেবা তৈরি করা হয়।
3. NFT মার্কেটপ্লেস ও ডিজিটাল সম্পত্তির ট্রেডিং – ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের সাহায্যে শিল্পকর্ম, মিউজিক, ভিডিও এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদকে টোকেনাইজ করা যায় এবং তা ক্রয়-বিক্রয় করা যায়।
4. ডি-ফাই (DeFi) সেবার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীভূত ব্যাংকিং তৈরি – ইথেরিয়াম বিভিন্ন DeFi প্ল্যাটফর্ম যেমন Uniswap, Aave, Compound ইত্যাদির মাধ্যমে লেনদেন, ঋণ প্রদান ও সুদ গ্রহণের সুযোগ দেয়।
5. মাল্টি-চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য ব্লকচেইনের সাথে সংযোগ স্থাপন – ইথেরিয়াম অন্য ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে ইন্টিগ্রেট হয়ে কাজ করতে পারে, যা একে আরও বহুমুখী করে তুলেছে।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন দিয়ে কী কী কেনাকাটা করা যায়? জনপ্রিয় পণ্য ও সেবার তালিকা 

ব্লকচেইন ও প্রযুক্তিগত পার্থক্য

বিটকয়েন (Bitcoin) ও ইথেরিয়াম (Ethereum) উভয়ই ব্লকচেইন-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তবে তাদের গঠন, কাজের নীতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্কেলেবিলিটিতে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

১. ব্লকচেইন আর্কিটেকচার

বিটকয়েন ব্লকচেইন:

• প্রাথমিক উদ্দেশ্য: পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) ডিজিটাল কারেন্সি লেনদেন নিশ্চিত করা।
• ব্লক সময়: গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি নতুন ব্লক যোগ হয়।
• কনসেনসাস অ্যালগরিদম: Proof of Work (PoW) ব্যবহৃত হয়, যেখানে মাইনিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন যাচাই করা হয়।
• স্ক্রিপ্টিং ভাষা: বিটকয়েনের স্ক্রিপ্টিং ভাষা Turing-incomplete, অর্থাৎ এটি সীমিত কার্যকারিতার স্মার্ট কন্ট্রাক্ট চালাতে পারে।

ইথেরিয়াম ব্লকচেইন:

• প্রাথমিক উদ্দেশ্য: স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ (DApps) চালানোর জন্য একটি উন্নত ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
• ব্লক সময়: গড়ে ১২-১৫ সেকেন্ডে একটি নতুন ব্লক তৈরি হয়, যা বিটকয়েনের তুলনায় অনেক দ্রুত।
• কনসেনসাস অ্যালগরিদম: বর্তমানে Proof of Stake (PoS) ব্যবহার করা হয় (Ethereum 2.0 আপগ্রেডের পর)।
• স্ক্রিপ্টিং ভাষা: ইথেরিয়াম Turing-complete ভাষা ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে জটিল স্মার্ট কন্ট্রাক্ট চালানো যায়।

২. স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও প্রোগ্রামিং ভাষা

বিটকয়েন:

• বিটকয়েন মূলত স্মার্ট কন্ট্রাক্ট সমর্থন করে না।
• এর স্ক্রিপ্টিং ভাষা Turing-incomplete, তাই জটিল প্রোগ্রামিং করা সম্ভব নয়।
• সীমিত স্ক্রিপ্টিং ক্ষমতা থাকায় শুধুমাত্র মৌলিক লেনদেন ও মাল্টি-সিগনেচার ওয়ালেট তৈরি করা যায়।

ইথেরিয়াম:

• ইথেরিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট্য স্মার্ট কন্ট্রাক্ট, যা Solidity প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা হয়।
• স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে DeFi (Decentralized Finance), NFT Marketplace, এবং DApps তৈরি করা সম্ভব।
• স্মার্ট কন্ট্রাক্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয় এবং মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না।

৩. স্কেলেবিলিটি ও আপগ্রেড ক্ষমতা

বিটকয়েন:

• বিটকয়েনের স্কেলেবিলিটি সমস্যা রয়েছে, কারণ এটি প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৫-৭টি লেনদেন প্রক্রিয়া করতে পারে।
• "Lightning Network" প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত লেনদেন নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
• বিটকয়েন ব্লকচেইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা কঠিন, কারণ এটি একটি কঠোর নিয়ম অনুসরণ করে।

ইথেরিয়াম:

• ইথেরিয়াম অনেক বেশি স্কেলেবল, কারণ এটি শার্ডিং (Sharding) প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা লেনদেনের গতি বাড়ায়।
• Ethereum 2.0 আপগ্রেড এর ফলে PoS সিস্টেম চালু হয়েছে, যা লেনদেনের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
• Layer 2 Solutions (যেমন: Polygon, Optimism) ইথেরিয়ামের স্কেলেবিলিটি আরও বাড়িয়েছে।

আরো পড়ুনঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিটকয়েনের ভূমিকা: নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

নিরাপত্তা ও লেনদেনের গতি

বিটকয়েন (BTC) ও ইথেরিয়াম (ETH) উভয়ই শক্তিশালী ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লেনদেনের গতি (Transaction Speed) একে অপরের থেকে আলাদা। আসুন এদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করি।

১. নিরাপত্তা 

বিটকয়েনের নিরাপত্তা:

Proof of Work (PoW) অ্যালগরিদম:

• বিটকয়েন ব্লকচেইন PoW (Proof of Work) ভিত্তিক, যা মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে ব্লক যাচাই করে।
• এই পদ্ধতিতে মাইনারদের বিশাল কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করতে হয়, যা ব্লকচেইনকে অত্যন্ত নিরাপদ করে তোলে।

ব্লকচেইনের অপ্রতিরোধ্যতা:

• বিটকয়েন নেটওয়ার্কে কোনো একক ব্যক্তি বা দল সহজে পরিবর্তন আনতে পারে না।
• ব্লকচেইনে একবার কোনো তথ্য যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব, ফলে এটি 51% অ্যাটাকের বিরুদ্ধে রক্ষা পায়।

হ্যাকিং ঝুঁকি:

• বিটকয়েন ব্লকচেইনে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট নেই, তাই বাগ বা এক্সপ্লয়েটের সুযোগ নেই।
• এখন পর্যন্ত বিটকয়েন ব্লকচেইনে কোনো বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।

ইথেরিয়ামের নিরাপত্তা:

Proof of Stake (PoS) অ্যালগরিদম:

• Ethereum 2.0 আপগ্রেডের পর থেকে এটি PoS-এ পরিবর্তিত হয়েছে, যেখানে মাইনারদের পরিবর্তে স্টেকাররা ব্লক ভেরিফাই করে।
• PoS সিস্টেম বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং আরও কার্যকরভাবে ব্লক যাচাই করতে সহায়তা করে।

স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ঝুঁকি:

• ইথেরিয়ামের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এর স্মার্ট কন্ট্রাক্ট সিস্টেম। যদি কোডে কোনো ভুল থাকে, তবে হ্যাকাররা তা এক্সপ্লয়েট করতে পারে।
• ইতিহাসে বেশ কয়েকবার ইথেরিয়ামের স্মার্ট কন্ট্রাক্টভিত্তিক প্রজেক্ট (যেমন: DAO Hack, Poly Network Hack) বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে।

51% আক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা:

• ইথেরিয়ামের PoS সিস্টেম 51% অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে এনেছে, কারণ এতে স্টেকারদের বিশাল পরিমাণ ETH ধরে রাখতে হয়।

২. লেনদেনের গতি (Transaction Speed)

বিটকয়েনের লেনদেনের গতি:

• গড় লেনদেনের সময়: প্রতি ১০ মিনিটে একটি ব্লক তৈরি হয়।
• লেনদেনের সংখ্যা (TPS - Transactions Per Second):
• বিটকয়েন নেটওয়ার্কে গড়ে ৫-৭ টি লেনদেন প্রতি সেকেন্ডে (TPS) সম্পন্ন হয়।
• স্কেলেবিলিটি সমস্যা থাকায় এটি অনেক ধীরগতির।

উন্নত প্রযুক্তি:

• বিটকয়েন স্কেলিংয়ের জন্য Lightning Network তৈরি করা হয়েছে, যা অফ-চেইন ট্রানজাকশন করে লেনদেনের গতি অনেক বাড়ায়।

ইথেরিয়ামের লেনদেনের গতি:

• গড় লেনদেনের সময়: প্রতি ১২-১৫ সেকেন্ডে একটি ব্লক তৈরি হয়।
• লেনদেনের সংখ্যা (TPS - Transactions Per Second):
• Ethereum নেটওয়ার্কে গড়ে ৩০ TPS সম্পন্ন হয়।
• Ethereum 2.0 ও Layer 2 Solutions (যেমন: Polygon, Optimism) যুক্ত হওয়ার পর এটি 100,000 TPS পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বিটকয়েন গ্রহণ করা ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর তালিকা

শেষকথাঃ উপসংহার 

বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম উভয়ই ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। বিটকয়েন মূলত ডিজিটাল সম্পদ ও লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ইথেরিয়াম শুধুমাত্র একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বরং স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও ডিএপস (DApps) তৈরির জন্য একটি শক্তিশালী ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম।

আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে মূলধনের নিরাপত্তা চান, তাহলে বিটকয়েন একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। অন্যদিকে, ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিক থেকে এগিয়ে। তবে বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে গবেষণা করা উচিত, কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার অত্যন্ত পরিবর্তনশীল।

আপনার মতামত কী? আপনি বিটকয়েন নাকি ইথেরিয়ামকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? কমেন্টে জানান!