অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর উপায়

কেন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা বর্তমান যুগে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, ব্যাটারি চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বাঁধার সৃষ্টি করে। সঠিক যত্ন এবং কিছু কার্যকর কৌশল ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব।

এই নিবন্ধে আপনি জানতে পারবেন এমন কিছু  পদ্ধতি, যা আপনার ফোনের চার্জ ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার ডিভাইসের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে। 

স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমানো 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্ক্রিন ফোনের ব্যাটারির সবচেয়ে বেশি শক্তি ব্যবহার করে। অতিরিক্ত উজ্জ্বল স্ক্রিন ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। 

কীভাবে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমাবেনঃ 

1. ম্যানুয়ালি উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করুনঃ আপনার প্রয়োজন অনুসারে উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখুন। ফোনের Setting > Display > Brightness Level অপশনে গিয়ে উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করুন। 
2. অটো ব্রাইটনেস চালু করুনঃ ফোনের সেন্সর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলো অনুযায়ী উজ্জ্বলতা সমন্বয় করবে। Settings > Display > Adaptive Brightness চালু করুন। 
3. ডার্ক মোড ব্যবহার করুনঃ Dark Mode চালু করে স্ক্রিনের ব্যাটারি খরচ কমানো যায়। এটি AMOLED ডিসপ্লের ফোনে আরও কার্যকর। 

স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমানোর উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। 
• চোখের ক্লান্তি হ্রাস পায়, বিশেষ করে রাতে। 
• ফোনের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়ে। 

স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে পারবে। 

আননেসেসারি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড বন্ধ করা 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড চলমান অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যাটারি খরচের অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড সক্রিয় থাকলে তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যাটারি এবং র‍্যাম ব্যবহার করে, যা ফোনের পারফরম্যান্সও কমিয়ে দেয়। 

কীভাবে আননেসেসারি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড বন্ধ করবেনঃ 

1. Setting > Apps > Running Apps: এখানে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান সমস্ত অ্যাপ দেখতে পাবেন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি বন্ধ করতে পারেন। 
2. অ্যাপ ক্লোজ করুন ম্যানুয়ালিঃ যেকোনো সময় আপনি Recent Apps (অ্যাপের মাল্টিটাস্কিং স্ক্রিন) থেকে অতিরিক্ত অ্যাপ গুলো বন্ধ করতে পারেন। 
3. অটো স্টার্ট বন্ধ করুনঃ কিছু অ্যাপ ফোন চালু হওয়ার সাথে সাথেই অটোমেটিক্যালি চালু হয়ে যায়, যা ব্যাটারি খরচ বাড়ায়। Setting > Apps > Autostart থেকে এসব অ্যাপ বন্ধ করে দিন। 
4. ব্যাটারি অপটিমাইজেশন ব্যবহার করুনঃ কিছু অ্যাপ ব্যাটারি অপটিমাইজেশন মোডে চলে আসে, যেগুলো ব্যাটারি কম খরচ করে। Setting > Battery > Battery Optimization থেকে প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো অপটিমাইজ করুন। 

আননেসেসরি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে বন্ধ করার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি খরচ কমে যায়। 
• ফোনের পারফরম্যান্স উন্নত হয়। 
• ফোন দ্রুত চলতে থাকে, এবং স্টোরেজ মুক্ত থাকে। 

ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপগুলো নিয়ন্ত্রন করে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকরী হতে পারে। 

অপ্রয়োজনীয় ফিচার বন্ধ রাখা 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে একাধিক ফিচার থাকে, যেগুলো সবসময় চালু থাকলে ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। যেমন  Bluetooth, Wi-Fi, GPS, NFC ইত্যাদি। এই ফিচারগুলো শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সময়েই চালু করা উচিত।

কীভাবে অপ্রয়োজনীয় ফিচার বন্ধ করবেনঃ 

1. Wi-Fi এবং  Bluetooth: ফোনে Wi-Fi এবং ব্লুটুথ চালু না থাকলে, সেগুলো বন্ধ রাখুন। Settings > Wi-Fi অথবা Settings > Bluetooth থেকে সহজেই বন্ধ করা যায়। Quick Settings Panel থেকেও Wi-Fi বা ব্লুটুথ দ্রুত বন্ধ করা যায়।
2. GPS (লোকেশন সার্ভিস): GPS বা লোকেশন সার্ভিস অপ্রয়োজনীয় সময়ে চালু রাখলে ব্যাটারি খরচ বাড়ে। Settings > Location থেকে লোকেশন বন্ধ করে দিন বা প্রয়োজনমতো চালু করুন। Battery Saver Mode এ থাকলে GPS এবং অন্যান্য ফিচারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম কার্যকরী হয়ে পড়ে।
3. NFC (Near Field Communication): NFC সাধারণত ব্যবহৃত হয় পেমেন্ট সিস্টেমে বা ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে। NFC এর মাধ্যমে ব্যাটারি খরচ হতে পারে, তাই এটি Settings > Connections > NFC থেকে বন্ধ রাখুন যখন এটি ব্যবহার না করছেন।
4. Airplane Mode ব্যবহার করাঃ যখন ফোনে নেটওয়ার্কের দরকার না থাকে, তখন Airplane Mode চালু করে আপনি সমস্ত ফিচার বন্ধ রাখতে পারেন। এটি ব্যাটারি সাশ্রয়ে সহায়ক হতে পারে, বিশেষত যখন আপনি ফোনে কোনো কল বা নেটওয়ার্ক সংযোগের প্রয়োজন অনুভব করছেন না।

অপ্রয়োজনীয় ফিচার বন্ধ রাখার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি খরচ কমে।
• ফোনের দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
• ফোনে অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক কমে, যা ডেটা সঞ্চয় করে।

অপ্রয়োজনীয় ফিচারগুলো বন্ধ রাখা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর একটি সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি। 

ডার্ক মোড ব্যবহার করা 

ডার্ক মোড একটি জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য যা ফোনের স্ক্রীনে অন্ধকার পটভূমি এবং উজ্জ্বল লেখা প্রদর্শন করে। এটি চোখের চাপ কমাতে সহায়ক এবং বিশেষভাবে AMOLED ডিসপ্লে ফোনে ব্যাটারি সাশ্রয়ে কার্যকরী।

কীভাবে ডার্ক মোড ব্যবহার করবেনঃ 

1. ডিভাইসের সেটিংস থেকে ডার্ক মোড চালু করাঃ Settings > Display > Dark Mode অপশনটি নির্বাচন করে ডার্ক মোড চালু করুন।
2. কুইক সেটিংস থেকে ডার্ক মোড চালু বা বন্ধ করাঃ ফোনের Quick Settings Panel (স্ক্রীনের উপরে সোয়াইপ করে) থেকেও ডার্ক মোড সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করা যায়।
3. অ্যাপের জন্য ডার্ক মোড সক্রিয় করাঃ কিছু অ্যাপ যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি ডার্ক মোড সমর্থন করে। আপনি অ্যাপের সেটিংস থেকে ডার্ক মোড চালু করতে পারেন।
4. অটো ডার্ক মোডঃ কিছু ফোনে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় অনুযায়ী অটো ডার্ক মোড চালু হয়। আপনি Settings > Display > Dark Mode থেকে এই অপশনটি চালু করতে পারেন।

ডার্ক মোড ব্যবহার করার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি সাশ্রয়ঃ AMOLED ডিসপ্লে ফোনে ডার্ক মোড ব্যাটারি খরচ কমায়, কারণ এতে অন্ধকার পিক্সেলগুলো বন্ধ থাকে।
• চোখের ক্লান্তি কমায়ঃ রাতে বা কম আলোতে ডার্ক মোড চোখের ওপর চাপ কমিয়ে দেয়।
• ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ায়ঃ ডার্ক মোড চালু থাকলে ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থাকে।

ডার্ক মোড ব্যবহার করা শুধুমাত্র আপনার চোখের জন্য সুবিধাজনক নয়, এটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয়ী রাখতেও সাহায্য করে। 

অ্যাপ নোটিফিকেশন সীমিত করুন 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপ নোটিফিকেশনগুলি ব্যাটারি খরচ বাড়াতে পারে, কারণ প্রতি নোটিফিকেশন পাওয়ার সময় ফোনের স্ক্রীন আলোকিত হয় এবং কিছু অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে। অপ্রয়োজনীয় বা অস্বীকারযোগ্য নোটিফিকেশন বন্ধ বা সীমিত করার মাধ্যমে আপনি ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারেন।

কীভাবে অ্যাপ নোটিফিকেশন সীমিত করবেনঃ 

1. নোটিফিকেশন সেটিংসে যানঃ Settings > Apps & notifications > Notifications এ যান। এখানে আপনি যে অ্যাপের নোটিফিকেশন কমাতে চান সেটি নির্বাচন করতে পারবেন।
2. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করাঃ Settings > Apps & notifications > See all apps থেকে প্রয়োজনীয় অ্যাপটি নির্বাচন করুন। তারপর Notifications অপশনটি নির্বাচন করে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
3. নোটিফিকেশন প্রিফারেন্স সামঞ্জস্য করুনঃ কিছু অ্যাপ আপনাকে তাদের নোটিফিকেশন ধরন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়, যেমন সাইলেন্ট, পুশ নোটিফিকেশন, বা সাধারণ নোটিফিকেশন। Settings > Apps & notifications > Notifications থেকে এই প্রিফারেন্স সামঞ্জস্য করুন।
4. ডু নট ডিস্টার্ব মোড ব্যবহার করুনঃ Do Not Disturb মোড ব্যবহার করে আপনি সমস্ত নোটিফিকেশন বন্ধ করতে পারেন। Settings > Sound & vibration > Do Not Disturb থেকে এই মোডটি চালু করুন।

অ্যাপ নোটিফিকেশন সীমিত করার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি খরচ কমে যায়।
• ফোনের পারফরম্যান্স উন্নত হয়, কারণ ব্যাকগ্রাউন্ডে কম অ্যাপ চলবে।
• আপনি অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকবেন, যা মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

অ্যাপ নোটিফিকেশন সীমিত করে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারেন এবং দৈনন্দিন ব্যবহার আরও কার্যকরী করতে পারবেন। 

ফাস্ট চার্জিং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন 

ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি দ্রুত চার্জিং সুবিধা দেয়, তবে এটি কিছুক্ষেত্রে ব্যাটারির আয়ু কমাতে এবং ব্যাটারি তাপমাত্রা বাড়াতে পারে, যার ফলে ব্যাটারি খরচ দ্রুত বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী এটি ব্যাটারির কার্যক্ষমতা এবং স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করতে পারে। 

কেন ফাস্ট চার্জিং থেকে বিরত থাকবেনঃ 

1. ব্যাটারি তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ ফাস্ট চার্জিংয়ের সময় ফোনের ব্যাটারি বেশি তাপ পেতে পারে, যা ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। তাপ ব্যাটারির কর্মক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ব্যাটারি সাইকেল সংকুচিত করতে পারে। 
2. ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমেঃ ফাস্ট চার্জিং যদি নিয়মিত ব্যবহৃত হয়, তবে এটি ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্ব কমিয়ে দিতে পারে। অধিক তাপ এবং দ্রুত চার্জিংয়ের কারণে ব্যাটারি সময়ের সাথে সাথে দ্রুত ক্ষয় হতে পারে। 
3. সাধারণ চার্জিংয়ের তুলনায় বেশি শক্তি খরচঃ ফাস্ট চার্জিং প্রক্রিয়া শক্তি দ্রুত প্রবাহিত করে, যা কিছু সময়ে আরও বেশি শক্তি খরচের কারণ হতে পারে। 

ফাস্ট চার্জিং ব্যবহার না করার উপায়ঃ 

1. স্ট্যান্ডার্ড চার্জিং ব্যবহার করুনঃ যখন দ্রুত চার্জিংয়ের প্রয়োজন না হয়, তখন স্ট্যান্ডার্ড চার্জিং মোড ব্যবহার করুন। ফোনের সাধারণ চার্জিং সিস্টেম ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী রাখে। 
2. চার্জিংয়ের সময় ফোন ব্যবহার না করাঃ ফোন চার্জিং অবস্থায় ব্যবহার করলে তা অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করতে পারে। ফোন চার্জ হতে দেওয়ার সময়, এটি অব্যবহ্রত রাখুন। 
3. চার্জিং কেবল এবং অ্যাডাপটার চয়ন করুনঃ সঠিক এবং মানসম্পন্ন চার্জিং কেবল এবং অ্যাডাপটার ব্যবহার করুন, যাতে আপনি ফোনকে নিরাপদে চার্জ করতে পারেন। 

ফাস্ট চার্জিং থেকে বিরত থাকার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারির আয়ু এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। 
• ফোনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ব্যাটারি ক্ষয় কমায়। 
• দীর্ঘমেয়াদে ফোনের কর্মক্ষমতা উন্নত হয়। 

ফাস্ট চার্জিংয়ের চেয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্জিং ব্যবহার করা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। 

লাইট ও ব্যাটারি ফ্রেন্ডলি অ্যাপ ব্যবহার করুন 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কিছু অ্যাপ ভারী এবং শক্তি খরচ করে, যা ব্যাটারি দ্রুত শেষ করে। তবে কিছু লাইট এবং ব্যাটারি ফ্রেন্ডলি অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়াতে পারেন। এসব অ্যাপ সাধারণত কম রিসোর্স ব্যবহার করে এবং ব্যাটারি সাশ্রয়ে সহায়ক হয়। 

কীভাবে লাইট ও ব্যাটারি ফ্রেন্ডলি অ্যাপ ব্যবহার করবেনঃ 

1. কম রিসোর্স খরচকারী অ্যাপ নির্বাচন করুনঃ Google Play Store থেকে এমন অ্যাপ নির্বাচন করুন যেগুলো "light" বা "battery-friendly" সংস্করণে উপলব্ধ। যেমন, Facebook Lite, Messenger Lite, Twitter Lite ইত্যাদি। এই অ্যাপগুলো ভারী গ্রাফিক্স এবং অপ্রয়োজনীয় ফিচারগুলি কমিয়ে রেখে ব্যাটারি সাশ্রয়ী কাজ করে।
2. অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি সীমিত করুনঃ কিছু অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকলে তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যাটারি খরচ করতে পারে। Settings > Apps > [অ্যাপ নাম] > Battery থেকে অ্যাপের ব্যাটারি খরচ পর্যবেক্ষণ করুন এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোকে নিষ্ক্রিয় করুন।
3. ফিচার কাস্টমাইজ করুনঃ কিছু অ্যাপের বিভিন্ন ফিচার থাকে যেগুলো ব্যবহার না করলে ব্যাটারি খরচ কমানো সম্ভব। যেমন, WhatsApp, Instagram ইত্যাদির অটো-প্লে বা অটো-আপডেট বন্ধ করা। Settings > Apps > [অ্যাপ নাম] > Data Usage থেকে এসব ফিচার বন্ধ করা যেতে পারে।
4. প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহার করুনঃ এমন অ্যাপ নির্বাচন করুন যেগুলোর কাজ আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যা ব্যাটারি কম খরচ করে। উদাহরণস্বরূপ, Google Maps Go, YouTube Go ইত্যাদি লাইট ভার্সন।

লাইট ও ব্যাটারি ফ্রেন্ডলি অ্যাপ ব্যবহার করার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি সাশ্রয় হয়।
• ফোনের পারফরম্যান্স উন্নত হয়, কারণ কম রিসোর্স ব্যবহার হয়।
• ফোনের স্টোরেজ খালি থাকে এবং ফোনে কম ল্যাগ হয়।

লাইট ও ব্যাটারি ফ্রেন্ডলি অ্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়াতে পারবেন এবং ফোনের সামগ্রিক পারফরম্যান্সও উন্নত হবে। 

ব্যাটারি সেভার মোড চালু করুন 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যাটারি সেভার মোড চালু করলে ফোনের ব্যাটারি খরচ কমে যায়, কারণ এটি অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ও ফিচারগুলো সীমিত করে। এই মোডটি ব্যবহার করে আপনি ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন, বিশেষ করে যখন আপনার ফোনের ব্যাটারি কম থাকে এবং আপনি এখনও ফোনটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে চান।

কীভাবে ব্যাটারি সেভার মোড চালু করবেনঃ 

1. ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাটারি সেভার মোড চালু করাঃ Settings > Battery > Battery Saver অপশনে যান। এখানে আপনি ব্যাটারি সেভার মোড চালু করতে পারবেন। কিছু ফোনে এটি Power Saving Mode বা Ultra Power Saving Mode নামে পরিচিত।
2. কুইক সেটিংস থেকে ব্যাটারি সেভার মোড চালু করাঃ স্ক্রীনের উপরে সোয়াইপ করে Quick Settings খুলুন। সেখানে আপনি ব্যাটারি সেভার মোডের আইকন দেখতে পারবেন। এটি একবার ট্যাপ করলে মোডটি সক্রিয় হবে।
3. অটো ব্যাটারি সেভার মোডঃ কিছু ফোনে ব্যাটারি সেভার মোড অটোমেটিক চালু হওয়ার ব্যবস্থা থাকে, যা ফোনের ব্যাটারি নির্দিষ্ট পরিমাণে কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়। Settings > Battery থেকে এটি সেট করা যায়।

ব্যাটারি সেভার মোড চালু করার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হয়ঃ ব্যাটারি সেভার মোড ব্যবহার করলে ফোনের ব্যাটারি খরচ কমে যায়, যা ফোনের ব্যাটারি বেশি সময় ধরে থাকে।
• অপ্রয়োজনীয় ফিচার নিষ্ক্রিয় হয়ঃ এটি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস, অ্যানিমেশন এবং অটো-সিঙ্ক ইত্যাদি নিষ্ক্রিয় করে, যাতে ব্যাটারি সাশ্রয় হয়।
• ফোনের কর্মক্ষমতা সামঞ্জস্য করা হয়ঃ ব্যাটারি সেভার মোড ফোনের কর্মক্ষমতা সামান্য কমিয়ে দেয়, তবে এটি ব্যাটারি খরচ কমানোর জন্য খুবই কার্যকর।

ব্যাটারি সেভার মোড চালু করে আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারেন এবং ফোনের ব্যাটারি আরও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারবেন। 

ফোন আপডেট রাখুন 

ফোনের সিস্টেম এবং অ্যাপস আপডেট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপডেটগুলি শুধুমাত্র নতুন ফিচার ও নিরাপত্তা উন্নতি আনতে সাহায্য করে না, বরং ব্যাটারি পারফরম্যান্সও উন্নত করতে পারে। প্রায়ই ফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলি সিস্টেম আপডেটের মাধ্যমে ফোনের শক্তি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশনে উন্নতি করে, যা ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

কেন ফোন আপডেট রাখা উচিতঃ 

1. ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশনঃ সিস্টেম আপডেটের মধ্যে ব্যাটারি ব্যবহারের অপ্টিমাইজেশন থাকতে পারে, যা ব্যাটারি সাশ্রয়ী হতে সাহায্য করে। কিছু আপডেট শক্তি ব্যবস্থাপনা উন্নত করে, যার ফলে ফোনের ব্যাটারি খরচ কমে যায়।
2. নতুন ফিচার এবং নিরাপত্তা উন্নতিঃ আপডেটগুলি নতুন ফিচার এবং নিরাপত্তা উন্নতি নিয়ে আসে, যা ফোনের সাধারণ কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব উন্নত করে। পুরনো সংস্করণের অ্যাপস ও সিস্টেম ত্রুটির কারণে ব্যাটারি খরচ বেশি হতে পারে, কিন্তু আপডেটের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করা হয়।
3. বাগ ফিক্সঃ কিছু আপডেটে ফোনের পুরানো বা সমস্যাযুক্ত কোডের সংশোধন করা হয়, যা ফোনের ব্যাটারি খরচ কমায়। পুরনো ভার্সনগুলি কিছু অ্যাপের ব্যাটারি খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু আপডেটের মাধ্যমে এটি ঠিক করা হয়।

কীভাবে ফোন আপডেট করবেনঃ 

1. সিস্টেম আপডেট চেক করাঃ Settings > Software update (বা Settings > About phone > Software updates) এ যান। এখানে আপনি যদি কোনো নতুন সিস্টেম আপডেট পাওয়া যায়, তবে তা ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে পারবেন।
2. অ্যাপ আপডেট করাঃ Google Play Store থেকে আপনার ফোনের সব অ্যাপ আপডেট করে নিন। Play Store খুলে Menu > My apps & games এ যান এবং সব অ্যাপ আপডেট করুন।
3. অটো আপডেট সক্ষম করুনঃ আপনি যদি না চান যে, আপনি প্রতিবার ম্যানুয়ালি আপডেট চেক করবেন, তবে Settings > Auto-update apps থেকে এই অপশনটি সক্রিয় করতে পারেন।

ফোন আপডেট রাখার উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি ব্যবহারের উন্নতি।
• ফোনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
• ফোনের পারফরম্যান্স এবং স্থায়িত্ব উন্নত হয়।
• নতুন ফিচার এবং অপ্টিমাইজেশন পাওয়া যায়।

আপডেট রাখার মাধ্যমে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় এবং পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারবেন।

লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন এড়িয়ে চলুন 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর জন্য লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন এড়িয়ে চলা একটি কার্যকরী পদ্ধতি। লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশনগুলি ফোনের ডিসপ্লে এবং প্রসেসরের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে, যার ফলে ব্যাটারি খরচ বাড়ে। এই অতিরিক্ত প্রক্রিয়া ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।

কেন লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন এড়ানো উচিতঃ 

1. ব্যাটারি খরচ বাড়ানোঃ লাইভ ওয়ালপেপার ফোনের ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, কারণ এটি ক্রমাগত অ্যানিমেশন বা মুভমেন্ট চালিয়ে যায়। অ্যানিমেশন ও ভিডিও ওয়ালপেপারগুলো ব্যবহার করার ফলে ফোনের CPU ও GPU বেশি কাজ করে, যা ব্যাটারি দ্রুত শেষ হতে পারে।
2. প্রসেসিং শক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারঃ অ্যানিমেশনগুলি ফোনের প্রসেসরের শক্তি বেশি ব্যবহার করে, যা সাধারণত ব্যাটারি খরচ বৃদ্ধি করে। ফোনের গ্রাফিক্স এবং প্রক্রিয়া শক্তির উপর চাপ তৈরি হলে, ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষিত হয়।
3. ফোনের পারফরম্যান্স কমে যায়ঃ লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন ফোনের কর্মক্ষমতা কমাতে পারে, কারণ এগুলি ফোনের সিস্টেম রিসোর্স (যেমন RAM, CPU) অতিরিক্তভাবে ব্যবহার করে।

লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন এড়ানোর উপায়ঃ 

1. স্ট্যাটিক ওয়ালপেপার ব্যবহার করুনঃ আপনার ফোনে সাধারণ স্ট্যাটিক ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন, যা ব্যাটারি সাশ্রয়ী এবং ফোনের কর্মক্ষমতায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
2. অ্যানিমেশন নিষ্ক্রিয় করুনঃ Settings > Developer options > Window transition scale এবং Animator duration scale থেকে অ্যানিমেশন এবং ট্রানজিশন স্কেল কমিয়ে দিন বা বন্ধ করে দিন।
3. এফেক্ট ও অ্যানিমেশন বন্ধ করুনঃ অনেক ফোনে বিশেষ কিছু সেটিংস থাকে, যা আপনাকে অ্যানিমেশন ও ইফেক্ট নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে। এগুলি বন্ধ করে ফোনের ব্যাটারি ব্যবহারে উন্নতি আনা সম্ভব।

লাইভ ওয়ালপেপার ও অ্যানিমেশন এড়ানোর উপকারিতাঃ 

• ব্যাটারি খরচ কমে এবং ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
• ফোনের কর্মক্ষমতা উন্নত হয়, কারণ ফোন কম শক্তি ব্যবহার করে।
• সাধারণ ওয়ালপেপার ও অ্যানিমেশন ছাড়া ফোনের পর্দা বেশি স্থির থাকে, যা স্ট্রেস কমায়।

লাইভ ওয়ালপেপার এবং অ্যানিমেশন এড়িয়ে চললে আপনি আপনার ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় করতে সক্ষম হবেন এবং ফোনের পারফরম্যান্সও উন্নত হবে। 

শেষকথাঃ উপসংহার 

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো অনেকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার ফোনটি পুরনো হয় বা আপনি অনেক বেশি অ্যাপ ব্যবহার করেন। তবে কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করে আপনি আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘায়িত করতে পারেন। এই নিবন্ধে, আমরা সেরা টিপস এবং ট্রিকস শেয়ার করলাম যা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়াতে সাহায্য করবে।

এই টিপসগুলির সাহায্যে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ আরও দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারবেন। নিয়মিত এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করলে আপনার ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী হবে।

স্মার্টফোনের সঠিক যত্ন নিন, ব্যাটারি সাশ্রয় করুন।