পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও রহস্য

 ভূমিকা 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, যা বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে UNESCO দ্বারা স্বীকৃত, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান। বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত এই বৌদ্ধবিহার প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার একটি জিবন্ত সাক্ষী হিসেবে কাজ করছে। এটি প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসিরা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করতেন। আজও এটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য, যেখানে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ধর্মীয় শিক্ষার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের সাথে সম্পর্কিত নানা বিষয় আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। তাই, এই ঐতিহাসিক স্থানটির সংরক্ষণ ও উন্নতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা এই মহামূল্যবান সম্পদকে আরও সম্মান জানাতে পারব। 

ইতিহাস এবং প্রতিষ্ঠাতা 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ইতিহাস শুরু হয় পাল রাজবংশের সময়, প্রায় ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীতে। এটি তখন এক বিরাট ধর্মীয় এবং শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাল সাম্রাজ্যের শাসনামলে এই বিহারটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সময় ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রতিষ্ঠার সময়, পাল রাজা ধর্মপাল ও তার পুত্র মহিপালসহ বিভিন্ন পাল সম্রাটরা এটির সংস্কার ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ধর্মপাল সম্রাট নিজে এই বিহারটির সংস্কারের কাজ শুরু করেন এবং তার শাসনামলে এটি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য একটি বড় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। 

এই বিহারটির উদ্দেশ্য ছিল শুধু ধর্মীয় উপাসনা এবং সাধনা নয়, বরং এটি ছিল বৌদ্ধধর্মের শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষকদের দ্বারা পাঠদান করা হত এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থের পাঠ ও আলোচনা হত। 

বিহারের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের মাধ্যমে, পাহাড়পুর এক সময় বৌদ্ধ সংস্কৃতি, দর্শন ও বৈজ্ঞানিক চিন্ততাধারার একটি উজ্জ্বল কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর প্রভাব শুধু ভারতবর্ষেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও বিস্তৃত হয়। 

এছাড়া, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ছিল ঐ সময়ে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্ডিতরা আসতেন এবং বৌদ্ধ দর্শন ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতেন। 

অতএব, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ইতিহাস মূলত পাল যুগের শাসনামলেই শুরু হয় এবং এটি সেই সময়কার বৌদ্ধধর্মের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পাহাড়পুরের স্থাপত্য 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের স্থাপত্য শৈলী হলো এক অনন্য উদাহরণ পাল যুগের প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যের। এটি ছিল এক বৃহৎ ধর্মীয় কেন্দ্র, যা বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও অধ্যয়ন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। বিহারটি একটি চতুর্মুখী পরিকল্পনায় নির্মিত, যার কেন্দ্রে একটি বিশাল মন্দির বা স্তুপ রয়েছে এবং ের চারপাশে ছোট ছোট কক্ষ, গ্যালারি, এবং পরিবর্ধিত এলাকা রয়েছে। 

১। বিহারের আয়তন ও গঠনঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের আয়তন প্রায় ১০৫ মিটার বাই ১০৫ মিটার, অর্থাৎ একটি বৃহৎ এলাকা জুরে এটি বিস্তৃত। কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রধান স্তূপটির চারপাশে ১০১ টি কক্ষ রয়েছে, যা একসময় সন্ন্যাসিদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত। প্রতিটি কক্ষের আকার ছিল ছোট, কিন্তু তাদের মাঝে সুন্দরভাবে পরিকল্পিত পথ ছিল। 

২। স্তুপ ও মন্দিরঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রধান আকর্ষণ হলো এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বড় স্তুপ, যা এক সময় বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত। স্তূপটির চারপাশে ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় কক্ষ, যা সন্ন্যসি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। স্তূপটির উচ্চতা এবং মন্দিরের গঠন শৈলী ছিল অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। এটি সম্ভবত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত। 

৩। গ্যালারি ও পোর্টিকোঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে বিশাল গ্যালারি এবং পোর্টিকো ছিল, যা ধর্মীয় উপাসনার জন্য ব্যবহার করা হতো। গ্যালারিগুলোতে ছিল ধর্মীয় চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য, যা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করত। 

৪। কর্মশালা ও পাঠাগারঃ 

বিহারের কিছু অংশ সম্ভবত শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হত। এখানে ধর্মীয় গ্রন্থের পাঠ, আলোচনা, এবং শিক্ষা প্রদান চলত। এছাড়া, সম্ভবত একটি পাঠাগারও ছিল, যেখানে ধর্মীয় ও দর্শনশাস্ত্র সংক্রান্ত গ্রন্থাদি সংরক্ষিত ছিল। 

৫। শিল্প ও ভাস্কর্যঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের শিল্পকলা ছিল অত্যন্ত উন্নত। এখানে বিভিন্ন ভাস্কর্য এবং মূর্তি খোদিত ছিল, যা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক এবং বুদ্ধের বিভিন্ন জিবন্ত দৃশ্য ফুটিয়ে তুলত। এই মূর্তিগুলো বিশেষভাবে প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পের অনন্য নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়। খননের সময় এখানে পাওয়া গিয়েছে বুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্য, পাশাপাশি অন্যান্য বৌদ্ধ দেব-দেবীর মূর্তিও। 

৬। বাহ্যিক সজ্জাঃ 

বিহারের বাহ্যিক সজ্জাও ছিল দৃষ্টিনন্দন। এর দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য খোদাই করা ছিল, যা বিহারের গৌরব এবং ধর্মীয় গুরুত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করতো। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের এই বিশাল স্থাপত্য এবং তার বিশিষ্টগুলি তখনকার সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের সমৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে। এটি পাল রাজবংশের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, যা দক্ষিণ এশিয়ার বৌদ্ধ স্থাপত্যের অমূল্য সম্পদ। 

সংস্কৃতি ও ধর্মীয় গুরুত্ব 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব অসীম। এটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থল নয়, বরং বৌদ্ধ সংস্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষা, এবং দার্শনিক চিন্তার একটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এর প্রতিষ্ঠা, স্থাপত্য এবং ধর্মীয় কার্যক্রম বৌদ্ধধর্মের এক অতুলনিয় বিকাশের সাক্ষী। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্বে নানান দিক রয়েছেঃ 

১। ধর্মীয় শিক্ষা ও সাধনাঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ছিল এক সময় বৌদ্ধধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা ও সাধনার এক প্রধান কেন্দ্র। এখানে সন্ন্যাসীরা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে অধ্যয়ন করতেন এবং ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতেন। বিহারের চারপাশে থাকা কক্ষগুলোতে প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মীয় পাণ্ডিত্যের পাঠদান চলত, যেখানে সন্ন্যাসি, পণ্ডিত, এবং দর্শনশাস্ত্রের ছাত্ররা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করতেন।

২। বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বৌদ্ধ সংস্কৃতির একটি কেন্দ্রিয় স্থান ছিল। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা বা সাধনার কেন্দ্র ছিল না, বরং এখানকার স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, এবং সাহিত্য বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হত, যার মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন উৎসব এবং অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এখানে ধর্মীয় উপাসনা এবং পঠন-পাঠন করতেন, যা তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

৩। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সংযোগঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার শুধু স্থানীয় ধর্মীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল। পৃথিবীজুরে বিভিন্ন অঞ্চলের পন্দিত ও বৌদ্ধ ধর্মগুরু এই বিহারে আসতেন ধর্মীয় শিক্ষা এবং দার্শনিক চর্চার জন্য। 

বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে, পাহাড়পুর বিভিন্ন ধর্মীয় এবং দার্শনিক গ্রন্থের পঠন এবং আলোচনা হতো, যা বৌদ্ধ দর্শন এবং আধ্যাত্মিক চর্চার এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। 

৪। ধর্মীয় চিত্রকলা ও ভাস্কর্যঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধ চিত্রকলা ও ভাস্কর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অংশ ছিল। বিহারের দেয়াল ও মেঝে খোদিত ছিল বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক, বুদ্ধের জীবনের ঘটনা, এবং বৌদ্ধ দেবদেবীদের চিত্র। এই শিল্পকর্মগুলো কেবল ধর্মীয় প্রতীক ছিল না, বরং বৌদ্ধ ধর্মের ও আধ্যাত্মিকতা বোঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হত। 

এছাড়া, পাহাড়পুরের ভাস্কর্য এবং মূর্তিগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলোর মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। 

৫। পাহাড়পুরের ধর্মীয় প্রভাবঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ধর্মীয় প্রভাব কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করেছিল। এটি ছিল সেই সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের এক আগ্রনি কেন্দ্র, যেখানে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ আসতেন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য। 

এছাড়া, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রভাব অন্যান্য ধর্মীয় সংস্কৃতির উপরও ছিল। এখানে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় ভাবনা এবং দর্শন আলোচনা করা হত, যা বৌদ্ধধর্মের সংলাপের অন্যান্য ধর্মের চিন্তাধারাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। 

সুতরাং, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থল নয়, বরং এটি বৌদ্ধ সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক শিক্ষা, এবং দার্শনিক চিন্তার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক জীবনে আজও অনুভূত হয়। 

প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান এবং খনন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা এর এতিহাস এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে আরও গভীরভাবে উদ্ঘাটন করেছে। খনন কাজের মাধ্যমে এখানে অনেক মুল্যবান প্রত্নবস্তু এবং তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা এর স্থাপত্যশৈলী, ধর্মীয় প্রভাব এবং বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশকে বুঝতে সাহায্য করেছে। 

১। খনন এর ইতিহাসঃ 

১৯২৩ সালে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়। এর আগে, এই বিহারটি সম্পর্কে তেমন কোন বিস্তারিত তথ্য ছিল না। খনন কাজ শুরু হলে এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু এবং স্থাপত্যের অমূল্য নিদর্শন পাওয়া জায়, যা বিশ্বজুরে গবেষক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। 

২। প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুঃ 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের খনন কাজের সময় বহু মুল্যবান প্রত্নবস্তু আবিস্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেঃ 

• বৌদ্ধ মূর্তি ও ভাস্কর্যঃ বিভিন্ন ধরনের বৌদ্ধ মূর্তি এবং ভাস্কর্য পাওয়া গেছে, যা বৌদ্ধধর্মের প্রতীক এবং বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তুলেছে। 
• ধর্মীয় ফলকঃ মাটির ফলক বা পাথরের ফলক খোঁজ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বুদ্ধের জীবনচরিত, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক এবং অন্যান্য ধর্মীয় দৃশ্যের চিত্রিত ছিল। 
• পোড়ামাটির ফলকঃ এসব ফলকগুলিতে বৌদ্ধধর্মের নানা উপমা ও প্রতীক খোদাই করা হয়েছে, যা প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকলা এবং ধর্মীয় ভাবনাকে চিত্রিত করে। 
• ধর্মীয় গ্রন্থের অংশঃ খননকালে কিছু ধর্মীয় পাণ্ডুলিপির টুকরো পাওয়া গেছে, যা বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ভাবনাগুলোকে তুলে ধরে। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের খননের সময় পাওয়া গেছে কিছু সামগ্রী যা প্রমাণ করে যে, বিহারটি এক সময় একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর মধ্যে থেকে কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপির টুকরো উদ্ধার হয়েছে, যা বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন ও আধ্যাত্মিক চিন্তা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে। এই তথ্যগুলি থেকে জানা যায় যে, এখানকার শিক্ষার্থীরা বিভিন্নি ধর্মীয় গ্রন্থ এবং বৌদ্ধ দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করতেন। 

এসব খনন এবং গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব আরও বাড়ছে, এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বৌদ্ধ স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। 

শেষকথাঃ উপসংহার 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার মাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান, যা বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিক একটি অমূল্য দৃষ্টান্ত। এই প্রাচীন বৌদ্ধবিহার শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এটি বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এর স্থাপত্যশৈলী, ধর্মীয় শিক্ষা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজও বিশ্বব্যাপী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বজায় রাখতে পারব, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি পর্যটক এবং গবেষকদের আকর্ষণ করবে। এর উপরে আরও গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে, এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আরও গর্বিত হবে। তাই, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এক অমূল্য রত্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।