মাত্র ৭ দিনে মোটা হওয়ার গোপন রহস্যঃ মোটা হওয়ার ১০টি কার্যকরী উপায়

প্রত্যেক মানুষের শরীরের গঠন আলাদা, এবং সকলের চাহিদাও ভিন্ন। অনেকে ওজন কমানোর জন্য উদ্বিগ্ন, আবার কেউ কেউ চান ওজন বাড়াতে। যদিও ওজন কমানো একটি সাধারণ চর্চা, মোটা হওয়ার প্রয়োজনও অনেকের জন্য জরুরি হতে পারে। বিশেষ করে, খুবই শীর্ণকায় মানুষদের জন্য এটি কখনও কখনও আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা

ওজন বাড়ানোর প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল পুষ্টিকর খাবার খওয়া। যেকোনো ধরনের খাবার খেয়ে মোটা হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পুষ্টিকর খাবার যেমন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, এবং ভিতামিন-মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা উচিত। আপনি যে খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন তা হলঃ 

• দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যঃ প্রতিদিন এক গ্লাস পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ বা দই খেলে শরীরে ক্যালোরি ও প্রোটিনের পরিমাণ বাড়বে। 
• মাংস ও মাছঃ মাংসে প্রচুর প্রোটিন ও চর্বি থাকে যা ওজন বাড়াতে সহায়ক। 
• ডিমঃ ডিমে রয়েছে প্রোটিন এবং সঠিক ফ্যাট যে দ্রুত ওজন বাড়ায়। 
• বাদাম ও বীজঃ বাদাম, যেমন আমন্ড, আখরোট, চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি অত্যন্ত পুষ্টিকর। এগুলো ওজন বাড়াতে কার্যকর। 
• মিষ্টি আলু ও অন্যান্য শর্করাযুক্ত সবজিঃ এগুলো শক্তির উৎস, যা ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। 

মোটা হওয়ার জন্য আপনি বড় পরিমাণ খাবার না খেয়ে দিনে ৫-৬ বার ছোট ছোট মিল খেতে পারেন। এতে শরীরে সারাদিন ধরে ক্যালোরি সরবরাহ থাকবে, যা দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ধরনের মিলে পুষ্টির ঘনত্ব বেশি হবে, অর্থাৎ অল্প পরিমাণ খাবারেও প্রচুর পুষ্টি পাওয়া যাবে। 

প্রোটিন আমাদের শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পেশী তৈরি এবং চর্বি বাড়াতে সহায়ক। যারা মোটা হতে চান, তাদের জন্য প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছেঃ 

• মুরগি, গরুর মাংসঃ এগুলোতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে যা দ্রুত পেশী বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 
• ডাল ও শস্যজাতীয় খাবারঃ ডাল, সয়াবিন, ছোলা ইত্যাদি প্রোটিনের দারুন উৎস। 
• ডিমঃ একটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। 
• প্রোটিন সাপ্লিমেন্টঃ প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে প্রোটিন শেক বা সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন। 

ক্যালরি শরীরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আপনি যদি বেশি ক্যালরি গ্রহণ করেন তবে তা শরীরে চর্বি বাড়াতে সাহায্য করবে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছেঃ 

• অলিভ অয়েলঃ এই তেলে প্রচুর ক্যালরি থাকে, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক। 
• পিনাট বাটারঃ এই মাখন ক্যালরি এবং প্রোটিনের চমৎকার উৎস। 
• চকলেটঃ বিশেষত ডার্ক চকলেট শরীরে ক্যালরি সরবরাহ করে। 
• শুষ্ক ফল ও বাদামঃ কিসমিস, কাজু, বাদাম প্রভৃতি খদ্যতালিকায় যুক্ত করুন। 

ওজন বাড়ানোর জন্য যথাযথ বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের পেশী পুনরুদ্ধার হয় না এবং তা ওজন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। শরীরের প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং পেশী পুনরুদ্ধারের জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১৫ টি সহজ উপায়

অনেকেই মনে করেন, মোটা হতে চাইলে ব্যায়াম করা উচিত নয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং পেশী বাড়ায়। যেসব ব্যায়াম ওজন বাড়াতে সাহায্য করে তা হলঃ 

• ওজন উত্তোলনঃ ভারোত্তোলন পেশী গঠনের জন্য দারুন উপায়। এটি শরীরের মাংসপেশী বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধি করে। 
• পুশ-আপস ও স্কোয়াটসঃ এগুলো শরীরের পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুগঠিত করে তোলে। 
• কার্ডিওঃ কার্ডিও ব্যায়াম খুব বেশি করতে হবে না, কারণ এটি বেশি করলে ক্যালরি কমে যায়। তবে হালকা কার্ডিও ব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখতে সহায়ক। 

ওজন বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। শরীরের ক্যালরি গ্রহন বৃদ্ধির সাথে সাথে পানি শোষণ ক্ষমতাও বাড়ে। পানির অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং শরীরের গঠন ব্যাহত হয়। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করুন। 

ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় মানসিক চাপ বিরাট প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপ শরীরে হরমোনের আরসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা ওজন বাড়াতে বাধা দেয়। আপনি যদি মোটা হতে চান, তবে আপনার মানসিক চাপ কমাতে হবে। প্রতিদিন মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন, যা শরীর এবং মনের প্রশান্তি এনে দেয়। 

সাত দিনে মোটা হওয়ার চেষ্টা করলে অবশ্যই ধৈর্য ধরে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। ওজন বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা করলে তা রাতারাতি ফল দিবে না। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, বিশ্রাম এবং জীবনযাত্রা পালন করলে এটি দ্রুত সম্ভব। 

অনেক সময় স্বাস্থ্যগত কারণে ওজন বাড়াতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। থাইরয়েড, হরমোনাল সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে দ্রুত মোটা হওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওজন বাড়ানোর পরিকল্পনা করলে তা নিরাপদ ও কার্যকরী হয়। 

আরো পড়ুনঃ মুখের কালো দাগ তোলার উপায় 

মোটা যতটা সহজ মনে হয়, ঠিক ততটাই কঠিন হতে পারে। তবে সঠিক পরিকল্পনা, খদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চললে সাত দিনের মধ্যে মোটা হওয়া সম্ভব। দ্রুত মোটা হওয়ার জন্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য। সাথে নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে এই পক্রিয়া আরো সহজ হয়ে যায়।