মহিলাদের পর্দার নিয়ম

ইসলামে পর্দা বলতে বোঝায় এমন একটি ব্যবস্থা জার মাধ্যমে নারী এবং পুরষ উভয়ই নিজেদের শালীনতা বজায় রাখে এবং অশালীন কর্যকলাপ থেকে নিজেদের দূরে রাখে। পর্দা নারীদের জন্য শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মর্যাদা ও সম্নান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

• মর্যাদা ও সুরক্ষা ঃ পর্দার মাধ্যমে নারী তাদের সম্নান এবং মর্যাদা বজায় রাখতে সক্ষম হন। এটি তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও অবমাননা থেকে রক্ষা করে। 
• আত্নশুদ্ধি ও ইবাদতের সুবিধা ঃ পর্দা একটি আত্নশুদ্ধির মাধ্যম, যা মহিলাদেরকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তাকওয়ার পথে উৎসাহিত করে। 
• সমাজে শালীনতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ঃ পর্দার বিধান মেনে চললে সমাজে শালীনতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচায়। 

২। কুরআন ও হাদিসে পর্দার নির্দেশনা ঃ 

ইসলামে পর্দার বিধান স্পষ্টভাবে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহিলাদের পর্দা সংক্রান্ত বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসের আলোচনায় এটি স্পষ্ট যে, পর্দা তাদের জন্য ফরজ একটি ইবাদত। 

সূরা আন-নুর (২৪ঃ৩০-৩১) ঃ 

• "মুমিন পুরষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সর্ববিবরণী। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, যা প্রকাশিত হওয়া স্বাভাবিক। এবং তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষ আচ্ছাদিত রাখে।" 

সূরা আল-আহযাব (৩৩ঃ৫৯) ঃ 

• "হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলো, তারা যেন নিজেদের উপর চাদর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চিনতে সহজ হবে এবং তারা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে।" 

হাদিসে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। নবী মুহাম্মদ (সা.) মহিলাদের পর্দা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন। 

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত ঃ 

• "আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) নবী মুহাম্মদ (সা.)- এর কাছে আসলেন, তখন তার গায়ে ছিল পাতলা কাপড়। নবী (সা.) তাকে বললেন, 'হে আসমা! যখন একজন মেয়ে বালেগ হয়, তখন তার শরীরের এসব অংশ (মুখ ও হাতের) ছাড়া কিছুই প্রকাশ করা উচিত নয়।" (আবু দাউদ, হাদিসঃ৪১০৪) 

হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত ঃ 

• "হে নবী! যখন আমি নামাজ পড়ি এবং বাড়িতে অপর পুরুষ থাকে, তখন কি আমি পর্দা করতে পারি?' নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তুমি পর্দা করবে, কারণ নামাজের সময়ও পর্দা গুরুত্বপূর্ণ।" (তিরমিজি) 

আরো পড়ুনঃ হালাল উপার্জনঃ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। হালাল রুজির গুরুত্ব 

নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যা পর্দার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পোশাকের মধ্যমে নারী তার পুরো শরীর ঢেকে রাখবে, তবে কিছু নির্দিষ্ট অংশ যেমন মুখ এবং হাতের কবজি পর্যন্ত অংশ প্রকাশিত থাকতে পারে। পোশাকের নিয়মগুলো নিম্নরূপ ঃ 

• ঢিলেঢালা পোশাক ঃ নারীদের পোশাক এমন হওয়া উচিত যা তাদের দেহের আকার বা গঠন প্রকাশ না করে। ঢিলেঢালা পোশাক পরার মাধ্যমে তারা শালীনতা বজায় রাখতে পারবেন। 
• পুরু কাপড় ঃ পোশাকের কাপড় পুরু হওয়া উচিত যাতে শরীরের ত্বক বা অন্তর্বাস দেখা না যায়। 
• সজ্জা বর্জন ঃ পোশাকের মধ্যে অতিরিক্ত সজ্জা বা অলংকার থাকা উচিত নয়, যা অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। 

৩.২. চেহারা ও চলাফেরা ঃ 

নারীদের চেহারা ও আচরণে শালীনতা বজায় রাখবে। তাদের চেহারা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ যেন অপরিচিত পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া, চলাফেরার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা পায়। 

মহিলাদের জন্য অপর পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। তারা পর্দার সীমার মধ্যে থেকে কথাবার্তা বলবে এবং প্রয়োজন ছাড়া অপর পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করবে না। কথাবার্তা বা আচরণে শালীনতা বজায় রাখতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ফিতনার সৃষ্টি না হয়। 

তাকওয়া বা আল্লাহর প্রতি ভয় এবং আনুগত্যের মাধ্যমে পর্দা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্দার বিধান মানার মাধ্যমে নারী তার আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হয়। 

পর্দা নারীর ইবাদতের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। আল্লাহর বিধান পালন এবং ইসলামের নিয়ম মেনে চলা একজন মুসলিম নারীর ধর্মীয় কর্তব্য। তদুপরি, নামাজ, রোজা এবং অন্যান্য ইবাদতের সময়ও পর্দার বিধান মানা জুরুরি। 

আরো পড়ুনঃ কোরআন ও হাদিসের আলোকে নারীর অধিকারঃ ইসলামে নারীর অধিকার 

পর্দা নারীর শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি নারীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং অবমাননা থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, পর্দা মানসিক সুরক্ষাও প্রদান করে, কারণ এটি নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং মর্যাদার বোধ জাগিয়ে তোলে। 

পর্দার বিধান মানার মাধ্যমে পারিবারিক এবং সামাজিক সুস্থিতি বজায় থাকে। নারী এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যে শালীনতা ও সম্মানের পরিবেশ গড়ে ওঠে, যা সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। 

পর্দা মানা একজন নারীর ধর্মীয় কর্তব্য। আল্লাহর আদেশ পালন এবং নবীর (সা) নির্দেশনা অনুসরণ করা ইমানদারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মহিলাদের পর্দা ইসলামের একটি অপরিহার্য বিধান যা তাদের শালীনতা, মর্যাদা, এবং সুরক্ষা রক্ষা করে। কোরআন ও হাদিসে পর্দার বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং মুসলিম নারীদের জন্য এটি একটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। পর্দার মাধ্যমে নারী তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করতে পারেন এবং আল্লাহর সন্তস্টি অর্জন করতে পারেন।